একনি ও ওপেন পোরস নিয়ে টেনশন? জেনে নিন বয়সভেদে পিম্পল হবার কারণ ও তার ইফেক্টিভ সল্যুশন!

Reasons for getting pimple and it’s solution

পিম্পল, একনি, ব্রণ বা র‍্যাশ এগুলো বেশ কমন স্কিন প্রবলেম। প্রায় সব বয়সী ছেলেমেয়েরা কম বেশি এই প্রবলেম ফেইস করে থাকে। তবে বয়স অনুযায়ী প্রপার স্কিন কেয়ার টেকনিক ও স্টেপস কিন্তু আলাদা হয়ে থাকে, এটা অনেকেই জানে না বা জানলেও প্র্যাকটিক্যালি এপ্লাই করা হয়ে ওঠে না। টিনেজ কোনো ছেলে বা মেয়ের পিম্পল ব্রেকআউট প্রবলেম, সেটার কারন ও এর স্কিন কেয়ারের প্রসেস কিন্তু মিডল এজ কারো একনি বা পিম্পল প্রবলেমের ট্রিটমেন্ট থেকে আলাদা হবে। ব্রণ দূর করতে আমরা নানান ব্র্যান্ডের ক্রিম, মেডিকেটেড ফেইস ওয়াশ, ঘরোয়া ফেইসপ্যাক ব্যবহার করে থাকি। তবে কাউকে হুট করে কোনো ট্রিটমেন্ট বা সল্যুশন সাজেস্ট করার আগে তার এই স্কিন প্রবলেম কেন হচ্ছে, বয়স কেমন, স্কিন টাইপ কি, কী কী প্রোডাক্ট তিনি রিসেন্টলি ইউজ করছেন, এই বিষয়গুলো জানা ও বোঝা খুবই ইমপরট্যান্ট। পিম্পল প্রবলেম থেকে বাঁচতে আর পিম্পল ও একনি চিরতরে দূর করার ইফেক্টিভ  উপায় বিস্তারিত জেনে নেবো আজ।

বিরক্তিকর এই পিম্পল ও একনি প্রবলেম কেন হয়?

আমাদের স্কিনের সিবাসিয়াস গ্ল্যান্ড থেকে সিবাম নামের একধরনের তৈলাক্ত পদার্থ নিঃসৃত হয়, এটা ন্যাচারালি হয়ে থাকে। এই গ্রন্থি নালির মুখ কোনভাবে বন্ধ হয়ে গেলে সিবাম এক্সট্র্যাকশন বাধাগ্রস্ত হয় এবং তা জমে ফুলে ওঠে, তখন এটাকেই ব্রণ বলা হয়। ইনফেকশন হলে এটা বেশ বড় হয়ে যায়, ভেতরে পুঁজজাতীয় জিনিস দেখা যায়, এটা থেকে ইচিনেস ও লালচে ভাব হতে পারে। এক্সপার্টদের মতে প্রোপাইনি ব্যাকটেরিয়াম একনিস নামের একধরনের জীবাণু এর জন্য দায়ী। ফাঙ্গাল ইনফেকশনের কারণে মূলত ফাঙ্গাল একনি হয়ে থাকে। সাধারণত মুখের পোরস বা লোমকূপে ময়লা জমে, হজমের সমস্যা থেকে, সস্তা ও আজে-বাজে স্কিনকেয়ার প্রোডাক্টের রিএকশনে, বংশগতভাবে কিনবা হরমোনাল কারনে ব্রণ হয়ে থাকে। ফেইস ছাড়াও বুকে, পিঠে, উরুতে পিম্পল ও একনি হতে পারে।

টিনএজ বা বয়ঃসন্ধিকালে পিম্পল ব্রেকআউটের কারণ-

ট্রপিক্যাল একনি ও প্রিমেন্সট্রুয়াল একনি টিনএজ বয়সে বেশি হতে দেখা যায়। ট্রপিক্যাল একনি আবহাওয়ার জন্য হয়ে থাকে, পলিউশন আর অতিরিক্ত গরমের জন্য অনেকেই এই প্রবলেমটা ফেইস করেন। ১২-১৮ বছর বয়সে অর্থাৎ বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের হটাত বেড়ে যাওয়া ব্রণের অন্যতম প্রধান কারন, এটা ন্যাচারাল। এই বয়সে স্কিন কেয়ার সম্পর্কে খুব একটা ধারনা থাকে না। ত্বক ঠিকমতো ক্লিন না করলে ধুলোময়লা জমে সহজেই ব্রণ ওঠে।

টিনেজে পিম্পল ট্রিটমেন্টে কী করতে হবে- 

  • এই সময়ে কোনরকম অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্স যেমন- বেনজোন, নিয়াসিনামাইড ইত্যাদি স্কিন কেয়ার রুটিনে রাখা উচিত নয়। এই বয়সে সিরাম ইউজের কিন্তু তেমন প্রয়োজন নেই।
  • রেগুলারলি সিম্পল এবং বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করা কিন্তু মাস্ট
  • অর্গানিক ক্লিনজার বা জেন্টেল ফেইস ওয়াশ দিয়ে মুখ ভালোভাবে ক্লিন করতে হবে
  • ফেইসে অ্যাকটিভ পিম্পল থাকলে স্ক্রাবিং করা যাবে না
  • রোজ মিস্ট টোনার স্প্রে করে নিতে পারেন টোনার হিসাবে। এরপর ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে স্কিন টাইপ বুঝে। অয়েলি ক্রিম এড়িয়ে চলে লাইট, জেল টাইপের ওয়াটার বেইজড ফর্মুলার ময়েশ্চারাইজার সিলেক্ট করলে সেটা পিম্পলপ্রবণ স্কিনের জন্য ভালো।
  • বাইরে যাওয়ার আগে সান প্রোটেকশন মাস্ট, SPF-50 মানের সানস্ক্রিন ইউজ করা উচিত। বাসায় ফিরে স্কিন ভালোভাবে ডাবল ক্লেনজিং করে নিতে হবে। তা না হলে পোর ক্লগড হয়ে স্কিনে আরও বেশি পিম্পল ব্রেকআউট হবে। স্কিন ভালোভাবে ক্লিন না করে কিন্তু ঘুমিয়ে পরা যাবে না!

টিনেজে হরমোনাল কারনে ব্রণ হলে সেটা সময়ের সাথে সাথে চলে যাবে, তাই চিন্তার কোনো কারন নেই! প্রচুর পানি পান করুন, ব্রণ খোঁটাখুঁটি করা একদমই উচিত নয়, তাহলে স্পট পড়ে যাবার সম্ভাবনা থাকে। তেল জাতীয় খাবার একটু এড়িয়ে যাবেন, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করবেন, সময়মতো রেস্ট নিবেন।

5/5

১৮-২৮ বছর বয়সের মধ্যে একনি বা পিম্পল কেন হয়? 

১৮ বছরের পর থেকে ন্যাচারালিই পিম্পল ব্রেকআউট অনেকটাই কমে যায়। কিন্তু অনেকের ক্ষেত্রে ব্যাতিক্রম দেখা যায়। স্যুট করে না এমন কোনো কসমেটিক বা স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট ট্রায়ালের কারনে এই সময় প্রায়ই পিম্পল দেখা যায়। এই সময় অনেকেই হুটহাট স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কিনে ইউজ করে ফেলে, সেটা স্যুট না করলে ব্রণ দেখা দিতে পারে। স্ট্রেস, পড়াশুনার প্রেশার, ঠিকমতো ত্বকের যত্ন না নেওয়া, রোদে ঘোরাঘুরি, পানি কম খাওয়া, হজমের সমস্যা, অতিরিক্ত তেলতেলে ত্বক ইত্যাদি কারনে এই বয়সে ব্রণ হতে পারে।

এই সময় পিম্পল ও একনি ট্রিটমেন্টের উপায়-

  • স্কিন কেয়ারে স্যালিসাইলিক এসিড যুক্ত প্রডাক্ট ইনক্লুড করা যেতে পারে। স্যালিসাইলিক এসিড হচ্ছে এক ধরণের বেটা হাইড্রক্সি এসিড যেটা স্কিনের গভীরে যেয়ে অতিরিক্ত সিবাম প্রোডাকশন কমিয়ে ফেলে, ফলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা কমে আসে।
  • বেসিক স্কিন কেয়ার ঠিক রেখে সিরাম ইউজ করতে পারেন ২০ বছরের পর থেকে। পিম্পল থাকলে ফিজিক্যাল এক্সফোলিয়েটর ইউজ করা যাবে না, মানে হার্শ স্ক্রাব দিয়ে ঘষাঘষি করা যাবে না!
  • নিম, গ্রিন টি, টি ট্রি অয়েল, অ্যালোভেরা, শসার রস এই উপাদানগুলো পিম্পল কমানোর জন্য খুবই ইফেক্টিভ। একনি ট্রিটমেন্টের জন্য স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট কেনার সময় এই উপাদানগুলো আছে কি না সেটা দেখে নিতে পারেন।
  • বেনটোনাইট ক্লে জাতীয় ফেসিয়াল মাস্কগুলো ব্রণ শুকানো ও দাগ কমাতে সরাসরি ভুমিকা রাখে। সপ্তাহে একদিন মুলতানি মাটি কিনবা হিলিং ক্লে দিয়ে প্যাক বানিয়ে ব্যবহার করুন। ব্রণের উপর টি ট্রি অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করতে পারেন, এতে স্কিন থেকে ব্রণের ব্যাক্টেরিয়া দূর হবে।
  • কোনো রকম স্পাইস যেমন লবঙ্গ, রসুন এবং লেবুর রস ব্রণের উপর সরাসরি লাগাবেন না। এতে স্কিন সেল বার্ন হয়ে যেতে পারে।

এ সময়ে আজেবাজে প্রডাক্ট ট্রাই না করে সঠিকভাবে স্কিন কেয়ারে করবেন, নিজের স্কিন টাইপ ও সমস্যা বুঝে। একনি ও পিম্পল প্রবলেম খুব বেশি বেড়ে গেলে বা না সারলে ডাক্তার দেখাতে ভুলবেন না, কেননা হরমোনাল কারনে ব্রণ হচ্ছে কি না সেটাও দেখে নিতে হবে। ঠিকমতো ঘুমাবেন, পানি পান করবেন, ত্বক পরিস্কার রাখবেন, স্কিন টাইপ অনুযায়ী প্রোডাক্ট সিলেক্ট করবেন একনি ব্রেকআউটের প্রবলেম তাহলে অনেকটাই কন্ট্রোলে থাকবে।

প্রেগনেন্সি টাইমে পিম্পল হবার কারণ  

এন্ড্রোজেন নামক হরমোন গর্ভকালীন সময়ে বেড়ে যায় যেটা স্কিনের সিবাম প্রোডাকশন বাড়িয়ে দেয়। অতিরিক্ত সিবামের সাথে ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, বাইরের ধুলোময়লা জমে স্কিনের পোরস ক্লগড হয়ে যায়। এতে পিম্পল ব্রেকআউট বেড়ে যায়। প্রেগনেন্সিতে অনেকের হজমের সমস্যা হয়, ঘুম ঠিকমতো হয় না, এসব কারনেও অনেক সময়ে পিম্পল ব্রেকআউট হতে পারে।

প্রেগনেন্সিতে পিম্পল প্রবলেমের সল্যুশন কিভাবে করবেন?

  • প্রেগনেন্সি টাইমে স্কিন কেয়ারে একটু বেশি সতর্ক থাকা উচিত কারণ অনেক অ্যাকটিভ ইনগ্রেডিয়েন্স প্লাসেন্টা দিয়ে সরাসরি পাস হয়ে বেবির ক্ষতি করতে পারে। একনি ট্রিটমেন্টে যেই উপাদানগুলো ব্যবহার করা হয়, সেগুলো বেশিরভাগই সেইফ না এই সময়ে। তাই জেনে, বুঝে, ডাক্তারের কনসালটেশন নিয়ে প্রডাক্ট সিলেক্ট করবেন।
  • বেসিক স্কিন কেয়ার রুটিন ফলো করতে পারেন। মাইল্ড ফেইসওয়াস, নিম, মুলতানি মাটির প্যাক, রোজ ওয়াটার, স্কিন অনুযায়ী ভালো ময়েশ্চারাইজার ইউজ করবেন।
  • সিলিকন ফ্রি, প্যারাবেন ফ্রি, ন্যাচারাল ইনগ্রেডিয়েন্সযুক্ত প্রোডাক্ট ইউজ করতে হবে। ফেইস ক্লিন রাখবেন, বেশি বেশি পানি খাবেন। ইনগ্রেডিয়েন্স লিস্ট দেখে প্রোডাক্ট কিনবেন। প্রেগনেন্সিতে যদি ব্রণের সমস্যা হয়, সেটা বেশিরভাগ সময়ে চলে যায় বেবি ডেলিভারির পর। তাই টেনশনের কোনো কারন নেই!

মিডল এজ বা ৩০ বছরের পর পিম্পল ও একনি প্রবলেমের কারণ

হরমোনাল সমস্যা, ওভারিতে সিস্ট, পানি কম খাওয়া, আর্লি মেনোপজ ইত্যাদি কারনে ৩৫-৪০ এর পরেও পিম্পল ও একনি প্রবলেম হতে পারে। স্কিন আর হেয়ার অনেকটাই বংশগত। অনেকের দেখা যায় যে সারাবছরই পিম্পল হয়, বয়স হয়ে গেলেও সেটা কমে না। জেনেটিকাল ইস্যু এখানে রিলেটেড, কিন্তু তারপরও কন্ট্রোলে রাখতে সঠিক নিয়মে স্কিনের যত্ন নিতে হবে।

মিডল এজে পিম্পল প্রবলেমের সল্যুশন-

  • প্রপার স্কিন কেয়ার রুটিন মেনে চলুন, স্কিনের টাইপ অনুযায়ী প্রোডাক্ট বেছে নিন। ক্লেনজিং, টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং, সিরাম, সানস্ক্রিন, ক্লে বেইসড মাস্ক এগুলো মাস্ট ইউজ। ন্যচারাল ও অর্গানিক একনি ট্রিটমেন্ট প্রডাক্টস আপনার জন্য বেস্ট হবে।
  • ব্রণের জন্য বিশেষভাবে ফরমুলেটেড ক্লেনজার, জেল এগুলো পাওয়া যায়, সেগুলো ট্রাই করতে পারেন। স্কিন কেয়ারে নতুন প্রোডাক্ট ট্রাই করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নিবেন, এতে রি-একশনের ভয় থাকে না।

বয়স অনুযায়ী স্কিন কেয়ার কিভাবে করলে পিম্পল ব্রেক আউট থেকে রেহাই পাওয়া যাবে জেনে গেলেন তো এবার? একনি ও পিম্পল প্রবলেম থেকে রক্ষা পেয়ে ঝকঝকে সুন্দর স্কিন পেতে এইটুকু বেসিক সেলফ কেয়ার তো করা যেতেই পারে, তাই না? সবার ক্ষেত্রে হয়ত রাতারাতি ব্রণ কমানো সম্ভব না, কিন্ত প্রপার ওয়েতে স্কিন কেয়ার করলে ফাস্টেস্ট ও ইফেক্টিভ রেজাল্ট পাবেন। পিম্পল ও একনি প্রবলেম ফেইস করলে এজন্য এখনি এক্সপার্টদের কনসালটেশন নিন, ইফেক্টিভ স্কিন কেয়ার প্রডাক্ট ইউজ করুন, পেয়ে যান, একনি ফ্রি, ফ্ললেস স্কিন!

Share:

Nutripure Bangladesh

Leave a Reply